মোঃ আসাদুজ্জামানঃ
গত জুলাই-আগস্ট ,২৪ মাসের গণঅভ্যুত্থানে ছোট বড় রাজনৈতিক দলের(আওয়ামী এবং তাদের দোসর ১৪ দল বাদে)অংশগ্রহণ ছিল। তবে শিবিরের কর্মীদের একটা উল্লেখ যোগ্য পার্টিসিপেশন ছিলো যা পরবর্তীতে বোঝা গেছে। তাছাড়া সাধারণ মানুষ রিকশাওয়ালা,চায়েরদোকানি,ঘরের বউ -বাচ্চা মোদ্দাকথা সকল শ্রেণি পেশার মানুষ রাস্তায় ধাবমান ছিল। বিশেষকরে ৩-৫ আগষ্ট দুপুর থেকে রাত ৩/৪ টা অবধি রাস্তায় মানুষের ঢল ছিল।
মুক্তিযুদ্ধ দেখেছি (তবে ছোট ছিলাম ও গ্রামে ছিলাম ) কিন্ত এরকম মানব-স্রোত পূর্বের অভ্যুত্থান সমূহে দেখিনি।
সেটা ঐতিহাসিক বিমূর্ত রুপ যা ভাষায় প্রকাশ করা দুরুহ।যেদিকে তাকাই রাস্তায় শুধু স্রোতের মতো মানুষ আর মানুষ।
মজার ব্যাপার হলো দীর্ঘ সময় মাঠে আন্দোলন মিছিল মিটিং করেও কিন্তু সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করা যায় নি।
গণঅভ্যুত্থানের ডাক ,অসহযোগের ডাক
আরও বহু কর্মসূচি দেয়া হয়েছে কিন্তু দলীয় লোক বা সমর্থক ছাড়া সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করা সম্ভব হয় নি।
কেন সম্পৃক্ত হলো আর কেনো হলো না তা
আমরা একটু বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করি।
একটি বড় দলের অনেক সমর্থক আছে কর্মী আছে।তাহলে তারা এতো চেষ্টা করে ব্যার্থ হয়েছিল কি জন্য ?
জনগণ কি তাদের নেতৃত্বে আস্থা রাখেনি ? অতীতে যগপৎ সরকারে থেকে আবার স্বতন্ত্র আন্দোলনে তারা কেন গেল ? এরমধ্যে রহস্য টা কি ?
জনগণের উপর ভরসা না করে পশ্চিমা শক্তির উপর নির্ভরতা বা তাদের কথা বা ইশারা ঈঙ্গিত অনুসরণ করা।
তাহলে মানুষ কি এসব ভালভাবে নেয় নি নাকি আপোষকামীতা ?
“RAW “ তো আগেও ছিল অভ্যুত্থানের পরেও ছিল। তারাও কিন্তু ব্যার্থ হয়েছে।তাহলে নেতৃত্বের উপর হয় মানুষ বিরক্ত ছিল বা আস্থা নেই অতীত অভিজ্ঞতার কারণে।
অথচ ছোট একটা বিষয় কোটা আন্দোলন কে ঘিরে মাত্র কয়েক দিনে কি না হয়ে গেল যা কেউ ভাবতেই পারেনি।কল্পনা তো দূরে থাক ?
মানুষ মনে করে বড়দল বা ছোটদল যারাই হোন না কেন যত সুন্দর সুন্দর কথা বা আশ্বাস বা প্রতিশ্রুতি জনগণকে দেন না কেন জনগণ আসলে জানে কখন কি করতে হবে ?
দেশে একটা বিশাল পরিবর্তন এসেছে।বাস্তবায়ন হোক বা না হোক মানুষ অকপটে অধিকারের কথা বলছে ? তাদের জন্য কারা কি করেছে বা করতে পারবে এটা একটা মুদির দোকান চায়ের দোকান থেকে সব শ্রেণী পেশার মানুষ বুঝে।বোকা ভাববার কোন কারণ নেই।
সুতরাং ইতোমধ্যে কারা কি করেছে বা করছেন তার খোঁজ খবর মানুষ রাখে।
রাষ্ট্র ব্যাবস্থায় মানুষের পরিবর্তন চাওয়াটাকে ,বা তার কি হবে ইত্যাদি যারা মূল্যায়ন করতে অপারগ হবে তারা বোকার স্বর্গে বাস করছে বলে আমরা মনে করি।
রাজনীতি বা নেতা-নেতৃ সম্পর্কে মানুষের ধারণা খুব খারাপ।এটার কারণ কমবেশী আমরা সবাই বুঝি।
তবে ব্যাতিক্রম আছে
যেমন প্রেসিডেন্ট জিয়া তাঁর নিষ্ঠা ,সততা,দেশপ্রেম ,নেতৃত্ব ,রাষ্টনায়কোচিত দূরদর্শীতা বাংলার মানুষ কখনো ভুলবে না ,স্বরণীয় হয়ে থাকবেন শতাব্দী ব্যাপি।
অথচ এরশাদ সম্পর্কে মানুষের ধারণা আমরা সবাই জানি।বলার অপেক্ষা রাখে না।মোটাদাগে বলা যায় দুর্নীতির প্রথম বীজ তিনি বপন করেছিলেন।মিডিয়া কু’র ভোট তার প্রথম আবিষ্কার। নারী লিপ্সু ,দূষ্চরিত্র রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে মানুষ জানে।
বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে মানুষের একটা ধারণা আছে।তিনি সাহসী ছিলেন ,সৎ ছিলেন ,বড় মাপের সংগঠক ছিলেন ,মানুষ তার বক্তৃতায় হিপনোটাইজ হতো ,রক্ত টগবগ করা বক্তৃতায় আজও বাংলাদেশে কেউ তাঁর সমকক্ষ নয়।কিন্তু রাষ্ট্র পরিচালনায় দূরদর্শীতার অভাব ছিল বলে মানুষ মনে করে।
আবার বেশ কিছু রাজনৈতিক অপরিনামদর্শী পদক্ষেপ ,ভুল পদক্ষেপ মানুষকে বিমুখ করেছে। সপরিবারে মৃত্যু কাম্য না হলেও ইতিহাস তাঁকে ক্ষমা করে নি।
যাঁরা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য বিভোর দিন গুনছেন তাঁদের মানুষের পালস্ টা বুঝার চেষ্টা করতে হবে।চাওয়া পাওয়া গুলো কে বিবেচনায় নিতে হবে নইলে ক্ষমতায় গেলেও হাসিনার পরিনতির কথা ভাবতে হতে পারে।
বর্তমানে কিন্তু অতীতের মতো এককেন্দ্রিক যা খুশি সেভাবে দেশ চালানো যাবে না।
মানুষ যখন ক্ষমতা থেকে নামানো শিখে গেছে সুতরাং ভবিষ্যতেও নামিয়ে দেয়া অসম্ভব নয়।
তাই রাজনৈতিক নেতৃত্ব কে খুব সাবধানে পা ফেলতে হবে।ভোটের জন্য ,ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য তাড়াহুড়ো করা সমীচীন হবে না।
কিছু সংস্কার লাগবেই, করতেই হবে। তা না হলে ক্ষমতায় টিকে থাকা দুষ্কর হবে বলে আমরা সচেতন নাগরিক সমাজ ধারণা করি।
রাজতন্ত্রের মডার্ন ভারশন পরিবার তন্ত্র মানুষ কে আর বেশি দিন খাওয়ানো যাবে না।বৃটিশ গেছে,রাজাবাদশা গেছে, জমিদারি গেছে,সামন্ততন্ত্র বিলীন। সুতরাং যারা পরিবারতন্ত্র নিয়ে বেশ মাতামাতি করছেন তাদের “বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ” থেকে শিক্ষা নেয়া জরুরি। আসুন আহবান এই হে বাংলাদেশ তুমি জেগেছ তাই
বৈষম্য দূর হবে তাই।
ভাঙ্গ আগল লালফিতার
দূর কর সব স্বৈরাচার।
পরিবার তন্ত্রের দাও কবর
গণতন্ত্রকে মুক্ত কর।
জেগেছে মানুষ জেগেছে দেশ
ধরা পড়বে ছদ্মবেশ।
সুতরাং সাবধান !
লেখক ও কলামিস্ট
মোঃ আসাদুজ্জামান
সাবেক কর কমিশনার
এবং আহবায়ক, কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ।