মোঃরোমান আকন্দ,
বিশেষ প্রতিনিধি,গাইবান্ধাঃ
মাঝি বাইয়া যাওরে অকুলো দরিয়ার সাগর বাইয়া যাওরে
।বৈশাখ ও জৈষ্ঠ এ দুই মাস গ্রীষ্মকাল।আর বৈশাখ মাসে নদীতে আসে পানির জোয়ার।সেই সাথে নদী, খাল ও বিল কানায় কানায় পূর্ণ হয় অথৈ পানি দ্বারা।
তাইতো এমন সময় গাইবান্ধা সদর উপজেলায় চলে নতুন নৌকা তৈরির ও পুরাতন নৌকাকে মেরামতের হিরিক।দুইয়ে মিলে পরিণত হয় এক মিলন মেলার।সে সময় লোকজন মেতে উঠে গল্প আর আড্ডায়।সেই সাথে ভাটিয়ালি সুর মিলিয়ে নৌকা তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করে থাকে নৌকা তৈরির কারিগররা।
সরজমিনে গাইবান্ধা সদর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদীর তীরে অবস্থিত নিভৃত পল্লীগ্রাম পার- বাগুড়িয়া বলাকার মোড়ে উপস্থিত হলে চোখে পড়ে বেশিরভাগ লোক গুলোই মৎস সম্প্রদায়ের সঙ্গে জড়িত।কেউবা জীবিকার তাগিদে মাছ ধরে, কেউবা মাছ বিক্রি করে পরিবার চালায়।
এমন সব ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, আমরা মাছ ধরা পেশার সঙ্গে জড়িত। মাছ ধরতে আমাদের নৌকার প্রয়োজন হয়। আর একটি নৌকা বানাতে আমাদের ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়।
গত বছরের তুলনায় এবছর কাঠের দাম একটু বেশি হওয়ায় নৌকা তৈরিতে খরচের পরিমাণ বেশি হচ্ছে।তারপরও আমাদের নৌকা বানাতে হচ্ছে।কারন এটাই আমাদের শেষ সম্বল হিসেবে আমাদের কাছে পরিচিত।
পঞ্চাশ ঊর্ধ্ব বয়স রহিম শেখ জানান, আগেরকার সময় রাস্তাঘাট যখন নিচু ছিল তখন অল্প পানিতে আবাদি জমি সহ রাস্তাগুলো পানিতে ডুবে যেত। আর সেই সময়কে কেন্দ্র করে বন্যার আগেই মানুষজন নিজেকে রক্ষার জন্য নৌকা তৈরি করতো।কিন্তু এখন রাস্তাঘাট উচু হওয়ায় তেমন বন্যাও হয়না আর নৌকাও চোখে পড়ে না।
কিন্তু যারা মৎস সম্প্রদায়ের সঙ্গে জড়িত শুধুমাত্র তারাই মাছ ধরার কাজে ব্যবহার করে ছোট-বড় নৌকা। তাই বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই এই অঞ্চলে বেড়ে যায় নৌকার কদর। এ অঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষের জীবিকার চাহিদা মেটাতে এখন দিন রাত পরিশ্রম করে একের পর এক নৌকা তৈর করছেন নৌকা তৈরির কারিগররা।
গাইবান্ধা সদর উপজেলার ঘাগোয়া,গিদারী, কামারজানি ইউনিয়নের বেস কয়েকটি গ্রামের মধ্যে পার – বাগুরিয়া, বলাকার মোড়, পঁচারকুড়া, আনালের ছড়া,কাউন্সিলের বাজার, কামার জানি গোঘাটসহ বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে দেখা যায় নৌকা তৈরি ও মেরামতের ধুম। কেউ কাঠ কাটছেন, আবার কেউবা মারছে পেড়াক,আবার কেউবা নৌকায় লাগাচ্ছে আলকাতরা। হাতুড়ি আর কাঠের খুটখাট শব্দ যেন মানুষের মনকে হরন করছে।
পার বাগুড়িয়া বলাকার মোড়ের নৌকার কারিগর মোঃ জুয়েল মিয়া বলেন,আমি অনেক দিন যাবৎ নৌকা তৈরির কাজ করছি। সামনে বর্ষা মৌসুম ইতিমধ্যে তৈরি করেছি বেশ কয়েকটি নৌকা। আগের মত নৌকার চাহিদা তেমন নেই, কিন্তু বর্ষার শুরুতে নৌকার চাহিদা থাকে তাই বসে না থেকে পরিবারের ভরন পোষনের জন্য নৌকা তৈরির কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।
তাইতো কিছু শিক্ষিত মহলের আহ্বান,
এ নৌকা তৈরির শিল্পটাকে টিকিয়ে রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথাযত পদক্ষেপ নেওয়া দরাকার।নয়তোবা আমাদের মাঝ থেকে হারিয়ে যাবে এমন সুন্দর লোকশিল্প।