রাশেদ ইসলাম, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
জয়পুরহাটে মোবাইল ফোন “আইএমই” পরিবর্তনের হিরিকে বিপদের মুখোমুখি হচ্ছেন ক্রেতারা। একি মোবাইল ফোন এর একাধিক “আইএমই” মিলে যাওয়ায় টাকা দিয়ে ফোন ক্রয় করার পরে ও হতে হচ্ছে চোর/অপরাধী, ক্ষুন্ন হচ্ছে মান সন্মান।
এমন ঘটনা ঘটেছে জয়পুরহাট ক্ষেতলাল উপজেলার পাঠানপাড়া বাজারে “মেসার্স মাহি মাওয়া এন্টারপ্রাইজ” এর মালিক মোনতাজুর রহমান (সোহাগ) এর বিরুদ্ধে।
জানা গেছে, গত ২ বছর পূর্বে “মেসার্স মাহি মাওয়া এন্টারপ্রাইজ” থেকে ৬ /৮ মাস মেয়াদে কিস্তিতে জেলার সদর উপজেলার বাঁকিলা গ্রামের আহসান হাবিব(২৬)আনুমানিক ১৩/১৪ হাজার টাকার একটি ওয়ালটন গ্রুপের PRIMO মোবাইল ক্রয় করেছেন। যার মধ্যে ৩ কিস্তির মত টাকা এখনো বাঁকি আছে। এ ছাড়া জানা গেছে, বর্তমান মোবাইল ফোন টি আহসান হাবিব অভাবের কারণেই বাঁকিলা গ্রামের সুলতান চৌধুরীর (৪৮)কাছে ৫০০০ টাকার বিনিময়ে বন্ধক রেখেছিলেন। যা সুলতান চৌধুরী গত ১৭ মাস থেকে ব্যাবহার করে আসছেন।।
এদিকে “মেসার্স মাহি মাওয়া এন্টারপ্রাইজ” থেকে গত ৬ মাস পূর্বে ক্ষেতলাল উপজেলার খাঁড়িতা গ্রামের মো: মামুনুর রশিদ (৩৫) ওয়ালটন গ্রুপের PRIMO- H10 মডেলের একটি ফোন ক্রয় করেছেন। যেটি অল্প সময়ের মধ্যে নিজের অজান্তেই হারিয়ে ফেলেন।।
পরবর্তীকালে হারিয়ে যাওয়া ৬ মাস বয়সী নতুন ফোন উদ্ধারের নথি মাএ ফোনের বক্স আর “আইএমই” অবশিষ্ট থাকে। যার মাধ্যমে মোবাইল উদ্ধারের আশায় মামুনুর রশিদ গত ১৬/১০/২০২৪ ইং তারিখে ক্ষেতলাল থানা অফিসার ইনচার্জ বরাবর একটি লিখিত আবেদন করেন। যার জিডি ট্রাকিং নং OB10H8 এবং জিডি নং: ৬০০ ফোন আইএমই ৫৫৫২২৬৮১০২৯০৫৫৩ ও ৩৫৫২২৬৮১০২৯০৫৬১ যা পরবর্তীতে জেলা ডিবি পুলিশ এর হাতে পৌঁছে।
গত ১৪/১১/২০২৪ ইং তারিখে উক্ত মোবাইল ফোনের “আইএমই” ট্রেকিং করে জয়পুরহাট জেলা ডিবি পুলিশের ৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি টিম সদর উপজেলার বাকিলা গ্রামের সুলতান চৌধুরীর বাড়িতে উপস্থিত হন।
এর পরে শুরু হয় যাচাই বাছাই, মোবাইলের কাগজ পএ ও আছে শুধু বক্সের “আইএমই” কোর্ড ২ টি সংখ্যা পরিবর্তন। তবে অভিযোগ কারি মামুনুর রশিদ এর “আইএমই” মিলে গিয়েছে, কিন্তু মিলছেনা ফোন। ২ বছরের পুরনো জরাজীর্ণ মৃত্যু প্রায় ফোনের অবস্থা, কিন্তু মামুনুর রশিদ এর ফোন ছিল একেবারে নতুন।।
এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ডিবি পুলিশ এর ৪ সদস্য সহ সাংবাদিক রাশেদ ইসলাম, হারানো মোবাইল ফোনের মালিক মামুনুর রশিদ, আহসান হাবিব, সুলতান চৌধুরী সহ বেশ কয়েকজন উপস্তিত হন “মেসার্স মাহি মাওয়া এন্টারপ্রাইজ” এ।
যাচাই বাছাই শেষে দেখা যায় ২ টি ফোন একি দোকানে কেনা, শুধু সময়ের ব্যাবধান। তবে জনমনে প্রশ্ন একি “আইএমই” ২ ফোনের হয় কি ভাবে। যদিও হয়েছে তাহলে ৬ মাস আগের কেনা ফোনের লোকেশন না এসে ২ বছর আগের কেনা ফোনের লোকেশন আসে কি ভাবে?
এক পর্যায়ে ডিবি পুলিশ এর ৪ সদস্য ফোন কেনাবেচা, রেজিষ্ট্রেশন, সিরিয়াল এর ইনভয়েস দেখার জন্য “মেসার্স মাহি মাওয়া এন্টারপ্রাইজ” এর মালিক সোহাগ কে বলেন।।
তবে তিনি দীর্ঘ ৩৫ মিনিটের খোঁজাখুঁজির পরে ডিবি পুলিশ এর কাছে সঠিক তথ্য দিতে পারেন নি।ফোন বিষয়ে ডিবি সদস্য দের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, আমরা কেবল মাএ অভিযোগ এর উপর তথ্য সংগ্রহ করেছি। সেই আলোকে যার ফোনের সাথে মিলে গিয়েছে সেটি বুঝিয়ে দেওয়া ছাড়া কিছু করার নেই।
এদিকে কিস্তিতে অধিক মুল্যে মোবাইল ফোন বিক্রয়কারী, সেই সাথে মোবাইল ফোন “আইএমই” পরিবর্তন কারী, মানুষের সন্মান ক্ষুন্ন করার মত অপরাধী ও অপরাধের মাস্টার মাইন্ড “মেসার্স মাহি মাওয়া এন্টারপ্রাইজ” এর মালিক সোহাগ কিস্তি বাঁকি রাখায় আহসান হাবিব এর প্রতি রেগে ওঠেন।
ডিবি পুলিশ এর সদস্য রাকিব বলেন, দোকানী ফোনের ইনভয়েস দেখাতে সময় নিয়েছেন, সময় মত না দেখাতে পারলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করবে উর্ধতন কর্মকর্তা।
পরবর্তীতে জানা গেছে, সেই পুরনো মোবাইল ফোন টি মামুনুর রশিদ এর ৩ বছরের ছেলে গ্রহণ করতে অনিহা দেখিয়েছে।।
কারন জানতে চাইলে মামুনুর রশিদ এর স্ত্রী বলেন, আমার বাচ্চা ফোন নিচ্ছেনা, বাবাকে বলছে এটা আমাদের ফোন না, নতুন ফোন কোথায়। এ ছাড়া উক্ত ফোন গ্রহন করতে নারাজ ভুক্তভোগী মামুনুর রশিদ। মামুনুর রশিদ এর স্ত্রী আর বলেন, আমার ফোনের কোন সন্ধান নেই, সেই সাথে আমার ফোনের “আইএমই” দিতে পারেনি। ফোনটি আমাদের নামে রেজিষ্ট্রেশন আছে, এখন যদি সেই ফোন দিয়ে কেউ বড় ধরনের অপরাধ করে তাহলে এর দায় কে নেবে?
এ ছাড়া পুরাতন ফোনের মালিক আহসান হাবিব ও সেই ফোন বন্ধকী মালিক সুলতান চৌধুরী বলেন, টাকা দিয়ে ফোন নিয়ে চোর হতে হল। এর প্রধান অপরাধী “মেসার্স মাহি মাওয়া এন্টারপ্রাইজ”। তিনি আর বলেন, ডিবিকে “মেসার্স মাহি মাওয়া এন্টারপ্রাইজ” যে সময় দিয়েছে তার মধ্যো যদি ইনভয়েস দেখাতে না পারে তাহলে কি ব্যাবস্থা নেবেন ডিবি পুলিশ সেটি দেখার অপেক্ষা।
এসব বিষয়ে শনিবার বিকেলে “মেসার্স মাহি মাওয়া এন্টারপ্রাইজ” এর মালিক সোহাগ এর সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, আমি মানছি আমার অপরাধ হয়েছে। আমার উচিৎ ছিল ফোনটা আহসান কে দেওয়ার। তবে তিনি প্রভাবশালী ব্যাক্তির জামাই, উচ্চপদে চাকুরী এসব বিষয়ে কথা বলে, যা রিপোর্ট করতে পারেন করেন আমার কোন সমস্যা নেই এমন মন্তব্য করেন।
এ ছাড়া এই অপরাধের সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য গত ৩ দিন থেকে প্রায় ১৯ জন ব্যাক্তি ফোন কলে ও বিভিন্ন ভাবে সাংবাদিক রাশেদ ইসলাম কে ভয়-ভীতি ও হুমকি দিয়ে আসছিল।
এসব কথায় সাংবাদিক রাশেদ ইসলাম তার মতামত ব্যাক্ত করে বলেন, যদি সাংবাদিক মুক্ত না হয়। তাকে স্বাধীন না করা হয় তাহলে সমাজে অপরাধ হয়ে যাক। যে যার মত গুছিয়ে নেক, এ ছাড়া কোন উপায় নেই। অপরদিকে এলাকায় মোবাইল ফোন “আইএমই” পরিবর্তন এর মাস্টারমাইন্ড এর অপরাধে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।। অনেকেই মনে করছেন এমন অসংখ্য মোবাইল “আইএমই” সমস্যা সোহাগ করে রেখেছেন, যেটি ভবিষ্যতে সকলের বড় ধরনের ক্ষতির কারন হয়ে দাঁড়াতে পারে।
এ ছাড়া বিষয় টি পূর্ণ তদন্ত সাপেক্ষে প্রধান অপরাধী কে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানিয়েছেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে।