বিগত বহু বছর ধরে রাজধানীর উত্তরার সাইদ গ্রান্ড সেন্টারের সাধারণ ব্যবসায়ীরা শক্তিশালী আওয়ামী সিন্ডিকেট দ্বারা নির্যাতিত হয়ে আসছে। ৫ই আগস্ট সৈরাচার সরকার পতনের পর সিন্ডিকেটটি রূপ বদল করে নিজেদের অবস্থান বহাল রেখেছে। এখন তারা ভিন্ন কৌশলে অন্যান্য ব্যবসায়ীদেরকে হয়রানি করছে। তাদের সকল অপকর্মের কথা জানা সত্ত্বেও তাদের বিরুদ্ধে সাধারণ ব্যবসায়ীরা মুখ খুলতে ভয় পায়।
এই সিন্ডিকেটের সদস্য মুল হোতা মজিবুর রহমান “চয়ন” । বাকিরা হলো নাইমুল ইসলাম, নাজমুল ইসলাম, মোস্তাক আলম ও রেনু। বিগত বছরগুলোতে আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে মার্কেটে চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব, হয়রানি সহ বিভিন্ন অত্যাচার মূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছে এই আওয়ামী দোসরা।
বর্তমানে সিন্ডিকেটটি বিভিন্ন সাধারণ
ব্যবসায়ীদের ছবি এডিট করে আওয়ামী ট্যাগ লাগিয়ে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করছে।ভয়ভিতি দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করছে।
ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে জানা যায়, আওয়ামী লীগের দোসর এই সিন্ডিকেট টি কিছুদিন আগে মার্কেটে অবৈধভাবে সমবায় সমিতির নামে ব্যবসায়ীদের কাজ থেকে চাঁদা তুলে সেই টাকা আত্মসাৎ করে। কোন কোন ব্যবসায়ী টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাদের ভয় ভীতি প্রদর্শন করে। চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটি এখনো তাদের অনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী জানায়, সম্প্রতি নাঈম এবং নাজমুলের নেতৃত্বে ৩০-৪০ জন সন্ত্রাসী এসে তার দোকান দখলের চেষ্টা করে। দোকান ছাড়ার জন্য তাকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেয়।
আর একজন ব্যবসায়ী জানায়, সিন্ডিকেটের মূল হোতা চয়ন তার দোকান থেকে কোন দাম না দিয়ে বিভিন্ন ধরনের পণ্য নিয়ে যায়। টাকা চাইতে গেলে বলে, “ফের টাকা চাইতে আসলে তোর ভুরি বের করে দিবো”। বর্তমানে তারা ভবনের নিচতলায় ২৫ নং দোকানটি দখলের পায়তারা করছে।
এই সিন্ডিকেটের প্রত্যেক সদস্যর নামে বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে ।
যেমন….
নাঈম:-কিছু দিন আগে সাঈদ গ্রান্ড সেন্টার এর নিচ তলায় এক ব্যবসায়ীর দোকানে ৩০-৪০ জন সন্ত্রাসীর মাধ্যমে আক্রমণ করান তার ব্যবসা দখল করার উদ্দেশ্যে। ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী তার ভয়ে কোন আইনি পদক্ষেপ নিতে পারেনি। নাঈম বরিশাল আওয়ামী লীগের সাথে জড়িত। তার বাবা ও ভাই নাজমুলসহ পুরো পরিবার আওয়ামী লীগের দোসর। ছাত্র জীবনে সে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলো বলে বিগত দিনগুলোতে ব্যবসায়ীদেরকে ভয় দেখাতো । রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সাইদ গ্রান্ড সেন্টারে ভুয়া ডিডের মাধ্যমে নিজের নামে ট্রেড লাইসেন্স করে ব্যবসা করছে।বর্তমানে কোহিনূর জেনারেল স্টোর দোকানটি সে অবৈধভাবে দখল করে আছে। তার কাছে বৈধ কোনো দলিল নেই। সে ওই দোকানে বসে হুন্ডি ব্যবসা পরিচালনা করে। বিভিন্ন পন্য সরবরাহকারীদের কে টাকা না দিয়ে তাদেরকে মারধর করে এরকম অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। অন্যান্য ব্যবসায়ীদেরকে সবসময় ভয়-ভীতি ও পেশী শক্তি প্রদর্শন করে দমিয়ে রাখে নাঈম।
রেনু:- সাইদ গ্রান্ড সেন্টার ব্যবসায়ী সমিতির বার্ষিক পিকনিকের খাবারের টাকা আত্মসাৎকারি। চুরি প্রমাণিত হওয়ায় তৎকালীন ব্যবসায়ী কমিটি থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়াও মার্কেটের বহু ব্যবসায়ীর কাছ থেকে পন্য নিয়ে টাকা না দেওয়া, বিভিন্ন কোম্পানি তার কাছে টাকা পরিশোধ না করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।সে ঢাকার টঙ্গীতে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। ভুক্তভোগী এক ব্যবসায়ী জানায়, রেনু তার কাছ থেকে একটি প্রোডাক্ট নেয় এবং সে টাকা পরিশোধ করে না। সেই টাকা চাইতে গেলে রেনু তার নামে ভোক্তা অধিকারে সে মামলা করে।
চয়ন:-মুলহোতা চয়নের বিরুদ্ধে অভিযোগের তালিকা অনেক বড়। বহু মানুষের টাকা আত্মসাৎ করে বহাল তবিয়তে ব্যবসা করে আসতেছেন। মার্কেট কমিটির সাবেক সভাপতি তকমা দিয়ে বহু লোকের কাছে টাকা নিয়ে টাকা ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানান। বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে পন্য নিয়ে টাকা দেয় না। ইম্পোর্টার হাউজের চেক ডিজঅনার মামলায় ইতিমধ্যে তিনি একবার জেল খেটেছেন। একজন ক্যামেরা সরবারাহকারি অভিযোগ করেন, চয়ন তাদের কাছ থেকে পন্য নিয়ে টাকা দিচ্ছে না ।টাকা চাইতে আসলে তাকে মারধর করে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগী এক ব্যবসায়ী জানায়, মার্কেট কমিটি নির্বাচনে পাশ করানোর কথা বলে তার কাছ থেকে 5 লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করে চয়ন । পতিত সরকারের অত্যাচারী জনপ্রতিনিধিদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল আওয়ামী সুবিধাভোগী চয়ন এর। ক্ষমতার দাপটে পাওনা টাকা চাইতে আসলে তার ভুরি বের করে দেয়ার হুমকি দেয় সে।
নাজমুল : আওয়ামী লীগের সক্রিয় সদস্য ছিল নাজমুল। দলের মিছিল মিটিংয়ে উপস্থিত থাকতো সব সময়। যার ভিডিওসহ বিভিন্ন প্রমাণ রয়েছে। অতিতে সে আওয়ামী লীগ পরিচয়ে সাধারণ ব্যবসায়ীদেরকে অত্যাচার করতো। বর্তমানে নাজমুল তার আওয়ামী পরিচয় ঢাকার জন্য সাধারণ ব্যবসায়ীদের ছবি এডিট করে স্থানীয় বিএনপি নেতাদের কাছে গিয়ে সেই ছবি সরবরাহ করে। মেট্রোরেল উদ্বোধনের ছবি এডিট করে ব্যবসায়ীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদা দাবি করে নাজমুল।
৫/মোস্তাক: চতুর স্বভাবের চক্রান্তকারি নাজমুল মার্কেটে সুদের ব্যবসা করে। অসহায় ব্যবসায়ীদের চরা সুদে টাকা ধার দেয় এবং টাকা সময় মতো না দিতে পারলে তাদেরকে অত্যাচার করে। তার ভাই একজন পুলিশ সদস্য হওয়ায় সে সবাইকে পুলিশের ভয় দেখিয়ে প্রভাব খাটায়।
দীর্ঘদিন ধরে এই সিন্ডিকেটের অত্যাচারে অতিষ্ঠ সাঈদ গ্রান্ড সেন্টারের সাধারণ ব্যবসায়ীরা। উত্তরার বহুল পরিচিত এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি অত্যাচারী আওয়ামী পন্থী সিন্ডিকেটের হাত থেকে মুক্ত করতে প্রশাসনের সাহায্য চায় তারা।